পুরানো ফোন নতুনের স্বাদ নেওয়ার কিছু টিপস

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি প্রপারআইডিয়ার প্রিয় পাঠকরা ভালো আছেন।

আমরা আমাদের পুরানো মোবাইল এর প্রতি যদি বোরিং চলে আসে তাহলেই মোবাইল চ্যাঞ্জ করে ফেলি। মানুষের মাইন্ড এক জিনিস দেখতে খুব বেশিদিন পছন্দ করে না। মোবাইল এর ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। মোবাইল খুব বেশিদিন ব্যবহার করে ফেললে, মোবাইলটা খুব ভালো পারফরমেন্স করলেও সহজে সন্তুষ্ট হতে পারি না।

এই সমস্যার কিছুটা দায়ী আমরা নিজেরাও আবার কিছুটা দায়ী মোবাইল কম্পানীগুলো। আগে কিন্তু এরকম জিনিসগুলো হত না। আপনি চিন্তা করে দেখুন ২০১০ বা ২০১১ এর দিকের কথা। তখন কিন্তু নকিয়া কিছু জনপ্রিয় মোবাইল খুব সেল হত। মানুষ একটা মোবাইল ব্যবহার করে নষ্ট করে আবার সেই মডেল এর মোবাইল কিনতো এমনও অনেক কেস রয়েছে।

আমার কথায় ধরি, আমি ৩১১০ ক্লাসিক ব্যবহার করেছি দুইবার। এবং নকিয়া C3 ব্যবহার করে নষ্ট হওয়ার পর চেষ্টা করেছিলাম আরেকটা নকিয়া C3 কিনবো কিন্তু মার্কেট আউট হয়ে গেছে। তবে এই যুগে এসে মনে হয় না কোন পাগলও একই মোবাইল ২-৩ বছর ব্যবধান পর আবার কিনবে।

এর বেশ কিছু কারণ আছে। মোবাইল কম্পানিগুলো এমন হারে মোবাইল রিলিজ করে যে ৬ মাস পরেই মনে হয় আমাদের কাছে যে আমাদের মোবাইল পুরানো হয়ে গেছে। এক বছর গেলে মনে হয় এই মোবাইল বহুবছর আগের ভার্সন এর মোবাইল। কম্পানিগুলো এভারেজ দুই বছর পর সার্ভির আপডেট প্রায় বন্ধ করে দেয়।

আপনি চাইলে নতুন একটা মোবাইল কিনে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তবে আমার মনে হয় ২ বছর এর আগে একটা মোবাইল চ্যাঞ্জ করা অপচয় ছাড়া অন্য কিছু না।

পুরানো ফোন নতুনের স্বাদ নেওয়ার কিছু টিপস


এত সমস্যার মধ্যেও আমরা এই টিউটোরিয়ালে চেষ্টা করবো আপনার বোরিং লাগা মোবাইল ফোনটা কিভাবে নতুনের স্বাদ নিতে পারেন সেই বিষয়গুলো তলে ধরার।

স্ক্রিন প্রটেক্টর পরিবর্তন করুন

মোবাইল এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস হল স্ক্রিন প্রটেক্টর। অনেক এর স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করেন অনেক বছর। এর মধ্যে যদি মোবাইল হাত থেকে পড়ে বা অন্যভাবে চাপ খেয়ে স্ক্রিন প্রটেক্টর স্কেচ পড়ে তাহলে সেই স্ক্রিন প্রটেক্টর আমাদের মোবাইলে ব্যবহার করলে কিন্তু একটা বোরিং চলে আসে। মনে হয় নিজের কাছে যে মোবাইলটা পুরানো হয়ে গেছে।

মোবাইল এর স্কিন প্রটেক্টর পুরানো বা ভাংগা দেখতে হলে আপনার সম্পূর্ন মোবাইলটাই কিন্তু পুরানো মনে হবে। তবে একটা স্ক্রিন প্রটেক্টর এর দাম কিন্তু খুব বেশি না। আপনি অল্প টাকা খরচ করেই এই সমস্যা সমাধান করতে পারেন।

নতুন একটি লাঞ্চার ইন্সটল করুন


একটা মোবাইল এর সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটে যখন নতুন একটা লাঞ্চার ইনস্টল করা হয়। যদি লাঞ্চার পরিবর্তন করেন তাহলে Operating System টাই নতুন মনে হয়। এখন বেশিরভাগ মোবাইল ব্যবহারকারী এন্ড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন। আর এন্ড্রয়েড মোবাইল এর সবচেয়ে বেশি যে সুবিধা সেটা হল যেমনই হক এটা কাস্টোমাইজ করে নেওয়া যায়।

একটা নতুন মোবাইল যেমনই থাকুন না কেন আপনি এন্ড্রয়েড মোবাইল নিজের মত কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।

Google Play থেকে অসংখ্য launcher ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এগুলো ইনস্টল দিলে আপনার সেটেই নতুন মনে হবে। আপনি চাইলে icon pack ও google play থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন তাহলে আরো বেশি ভালো হয়।

তবে খেয়াল রাখবেন যেন এমন launcher ইনস্টল না দেন যেটা আসলে মোবাইল এর ক্ষতি করে বেনেফিট এর চেয়ে। যেমন কিছু লাঞ্চার ব্যাটারি খুব কনজিউম করে। সো চেষ্টা করবেন এমন লাঞ্চার ব্যবহার করতে যেগুলো মোবাইলের তেমন ব্যাটারি ব্যয় হয় না তবে খুব মোবাইলে সৌন্দর্য বর্ধন করে।

জনপ্রিয় কিছু লাঞ্চার হল
  1. Nova Launcher
  2. Niagara Launcher
  3. Smart Launcher 5
  4. AIO Launcher
  5. Hyperion Launcher
  6. Action Launcher
  7. Customized Pixel Launcher
  8. Apex Launcher
  9. POCO Launcher
  10. Microsoft Launcher

যদি সম্ভব হয় ব্যাটারি পরিবর্তন করুন

এন্ড্রয়েড মোবাইল এর সবচেয়ে কমন যেই প্রবলেম সেটা হল ব্যাটারিতে সমস্যা। মোবাইল এর বয়স বছর পার না হতেই ব্যাটারির চার্জ এর আয়ু কমে যায়। এবং এই সমস্যাটার জন্যই সবাই ভাবতে বাধ্য হয় মোবাইলটা চ্যাঞ্জ করার।

যদি আপনার সামর্থ্য থাকে তাহলে ব্যাটারি এর অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে চ্যাঞ্জ করে নেওয়াই ভালো। তবে অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টার ছাড়া ব্যাটারি চ্যাঞ্জ করবেন না। যদি করেন তাহলে হিটে বিপরীত হতে পারে।

সাধারনত অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টারগুলো থেকে ১৭০০-২০০০ এর মধ্যে মোবাইল ব্যাটারি চ্যাঞ্জ করা যায়।

অব্যবহৃত মিডিয়া ফাইল ডিলিট করুন

অনেকে আছেন একটা মোবাইল নতুন অবস্থায় যে যে মিডিয়া কনটেন্ট মোবাইলে রাখেন সেটা আর ডিলেট করেন না। আপনি সেকল ভিডিও, ফোটো বা ফাইল ইউজ করেন না সেগুলো মোবাইলে রাখবেন না। এতে প্রয়োজনীয় ফাইল সহজে কাজের সময় খুজে পাওয়া যায় না। এর ফলে নিজের মোবাইল এর প্রতি একটা বোরিং কাজ করে।

আবার আপনার অপ্রয়োজনীয় ফাইল রাখার ফলে ROM এ Storage সমস্যা পোহাতে পারেন। এমন হলে আপনার মোবাইল স্লো হয়ে আসবে। এবং দিন দিন মোবাইল এর প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসবে। তাই always চেষ্টা করবেন মোবাইল এর স্টোরেজ যথেষ্ঠ্য পরিমান খালি রাখতে।

স্টোরেজ খালি করতে আপনি বিভিন্ন ডিপ ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ব্যবহার করলে মোবাইলে যে অপ্রয়োজনীয় junk ফাইল জমে সেগুলো দূর হয়ে যাবে।

মোবাইল এর অ্যাপ আপডেট রাখুন

এন্ড্রয়েড মোবাইল এর অ্যাপ আপডেট রাখতে সিম্পল Google Play এ চলে যাবেন, তারপর  আপনার প্রোফাইলে ট্যাপ করে নিবেন, Manage apps & device এ ক্লিক করুন এবং Update all এ ট্যাপ করুন।

এভাবে আপনি মোবাইল আপসগুলো আপডেট করে নিতে পারেন। অ্যাপসগুলো আপডেট করে নেওয়াই ভালো। অনেক সময় আপডেট এর ফলে বাগ থাকলে রিমুভ হয়। নতুন টেকনোলজি আপডেট হয়। এর ফলে আপনার বোরিং লাগাটা দূর হতে পারে।

সব সময় চেষ্টা করবেন অফিসিয়াল স্টোর থেকে মোবাইল এর আপস ডাউনলোড করতে না হলে আপনি বিভিন্ন spyware বা হ্যাকারদের কবলে পড়তে পারেন।

ওয়ালপেপার পরিবর্তন করুন

ছোট ছোট বিষয়গুলো আমরা ইগনোর করি। আসলে এই ছোট ছোট বিষয়গুলো চ্যাঞ্জ করার ফলেও কিন্তু অনেক হ্যাপিনেস চলে আসে। ওয়ালপেপার কিন্তু মোবাইল ওপেন করলেই আপনার দেখতে হয়। এখন এক ওয়ালপেপার সব সময় দেখতে দেখতে চোখেরও ভালো লাগা বন্ধ হয়ে যায়। আপনাকে ভাবতে বাধ্য করে যে এটা পুরাতন একটা মোবাইল।

মোবাইল এর নতুনত্ব এর স্বাধ পেতে চাইলে আপনি প্রতিমাসেই বা প্রতি সপ্তাহে মোবাইল এর ওয়ালপেপার চ্যাঞ্জ করে দেখতে পারেন।

মোবাইল এর অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন

মোবাইল এর যদি ফার্মওয়ার আপনি আপডেট না দেন তাহলে কিন্তু মোবাইল এর চ্যাঞ্জ বা পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন না।

একটা মোবাইল আপডেট দেওয়া হয় এজন্যই যে প্রিভিয়াস ভার্সনে কিছু ভাগ আছে সেটা দূর করার জন্য। তাই আপডেট দেওয়া ভালো। তবে এক্ষেত্রে অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেন যেমন অনেকে বলে নতুন আপডেট এর ফলে ব্যাটারির ডিসচার্জ এর পরিমান বেড়ে যায়। এটা হতে পারে আমি অস্বীকার করছি না। তবে এটা ক্ষনিকের জন্য হয়। এমন প্রবলেম ডেভলোপাররা আইডেন্টিফাই করতে পারলে খুব সহজেই সোল্ভড করে দেয়।

আমাদের কথা

বর্তমান মোবাইলগুলো আপনি যত্ন করে ব্যবহার করে এবং উপরের টিপসগুলো ব্যবহার করে হয়তো নতুনের স্বাদ নিয়ে অনেক দিন ব্যবহার করতে পারেন।

যদি আপনার টাকা-পয়সা সমস্যা না থাকে তাহলে নতুন মোবাইল কিনেও নিজের বোরিং দূর করতে পারেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post